• বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খুলনায় ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট-নিম্নাঞ্চল

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খুলনা মহানগরীর নিচু এলাকা। থেমে থেমে হচ্ছে ভারী বৃষ্টি, সেই সঙ্গে বইছে ঝড়ো হাওয়া। গত ৪ দিনের আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভারী বর্ষণের কারণে সোমবার সকালে সড়কে যানবাহন ছিল কম। যানবাহন স্বল্পতার কারণে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জরুরি কাজে বাইরে গিয়ে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। রিকশা ও অটোরিকশাচালকরা বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে ইচ্ছামতো ভাড়া দাবি করেন। ফলে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই লোকজনকে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। রাস্তায় পানি জমে থাকায় খানাখন্দে পড়ে পথচারীরা দুর্ঘটনায় পড়েন। বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর ও সড়কের পাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ। টানা বৃষ্টিতে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের নিচতলার ক্লাস রুম, প্রশাসনিক ভবনের নিচতলা, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পানিতে থইথই করছে। একই অবস্থা খুলনা সরকারি টিসার্চ ট্রেনিং কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক ইনস্টিটিউটে প্রবেশের রাস্তা এবং খেলার মাঠের। গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের খেলার মাঠে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। জামিআ রশীদিয়া গোয়ালখালী পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিতে নগরীর খালিশপুর মুজগুন্নি, বাস্তুহারা কলোনী, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ি গেট, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, রায়েরমহল, বয়রা বাজার, গোবরচাকা নবীনগর, রয়েল মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভীপাড়া, টিভিবাউন্ডারী রোড, রয়েল মোটেলের মোড়, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, মহির বাড়ি খালপাড়সহ নগরীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক পানিতে ডুবে যায়। ভারী বর্ষণে আড়ংঘাটা থানাধীন বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতী মৌজার সহস্রাধিক মাছ চাষির ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি এবং সাদা মাছ। তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল। সর্বনাশ হয়েছে চাষিদের। উদ্বিগ্ন এবং হতাশ হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের চাষিরা। এছাড়া অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন উপজেলার বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও আমন ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়ারে নদীতে বেড়েছে পানির উচ্চতা। এতে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের মানুষ। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিকাশ রায় বলেন, ১১ বছর খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে চাকরি করি কখনও এরকম পানিবন্দি অবস্থা দেখিনি। বারান্দায় হাঁটু পর্যন্ত পানি। বাংলা বিভাগের ডেস্কের নিচে পানি। ক্লাস রুমগুলোতে পানি। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বৃষ্টির পানি। ৯নং ওয়ার্ডের বাস্তুহারার ১২নং রোডের বাসিন্দা মো. নাসির হাওলাদার বলেন, টানা ভারী বৃষ্টিতে আমাদের এলাকার প্রায় ৩০ ভাগের বেশি বাড়ির নিচতলায় হাঁটু পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের ঘরে পানি ডুকে পড়ায় মালামাল অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হচ্ছে। বাথরুমে পানি ডুকে পড়ায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এছাড়া রান্না ঘরে পানি ঢুকে মাটির চুলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রান্না করা যাচ্ছে না। তেলিগাতী গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের এলাকার অনেক দুর্ভোগ। পানি সরতে পারতেছে না। এ কারণে পানি জমে আছে। প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই এরকম হয়। এলাকার অনেক ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। তাদের দুর্ভোগ হচ্ছে বেশি। খুলনা সরকারি টিসার্চ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের ফোকাল পয়েন্ট বিধান চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রতিষ্ঠানের নিচ তলায় পানি জমে যায়। পানি জমে থাকে প্রতিষ্ঠানে ঢোকার রাস্তায়। হাঁটু পানি জমা হয় প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠে। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় বিএড অনার্স কোর্সের ক্লাসগুলো নেয়া হয়। ক্লাসের ভেতর পানি ঢুকে যাওয়ায় নিচের রুমগুলোতে ক্লাস নেয়া সম্ভব হবে না। খুলনা আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সোমবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আরো ২-১ দিন বৃষ্টি থাকবে।