• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে ছোট করা যাবে না

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২৪  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছোট করা যাবে না। শেখ মুজিবুর রহমানের যতটুকু সম্মান প্রাপ্য, তা তাকে দিতে হবে; একইভাবে জিয়াউর রহমানের যে সম্মান প্রাপ্য, তাকে তা দিতে হবে। এতবড় একটি গণ-অভ্যুত্থানের পরে দাঁড়িয়েও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য যখন নেতিবাচক কাজগুলো করা হয়, আমরা আমাদের জায়গা থেকে এগুলো কখনোই সমর্থন করি না। আমাদের মধ্যে যদি কেউ এ কাজগুলো করে থাকেন, তাদের বয়কট করা হোক।’ শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ কথা বলেন। সারজিস বলেন, ভিডিওতে দেখেছি আমার বাবার বয়সি একজনকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে, একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে। লোকজন যাচ্ছেতাই বলেছে। অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে। আমার মায়ের বয়সি একজনের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। সাংবাদিক ভাইবোনদের ওপর হামলার এমন অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা আলোচনা করেছেন জানিয়ে সারজিস বলেন, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এসব ঘটনার সঙ্গে কোনো সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়কের যুক্ততা পাওয়া গেলে তাকে টিম থেকে বহিষ্কার করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যা করা প্রয়োজন সেটি করা হবে। আমাদের মধ্যে যদি কেউ এ কাজগুলো করে থাকে, তাদের বয়কট করা হোক। এই সমন্বয়ক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ ধরনের কোনো কিছুকে প্রমোট করে না যে কেউ কোনো হোস্টেলে গিয়ে সার্চ করবে, কোনো আবাসিক হোটেলে যাবে, কোনো অধ্যাপককে জোর করে নামিয়ে দেবে। আমরা এগুলো সমর্থন করি না। আমরা কোনো অথরিটি নই, আমরা একটি প্রেশার গ্রুপ। দুর্নীতিবাজ বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের অপসারণের জন্য আমরা দাবি তুলতে পারি। কিন্তু এটি করতে বাধ্য করতে পারি না। আমরা পদত্যাগের দাবি তুলতে পারি, কিন্তু কাউকে অপসারণ করতে হবে তদন্তের ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ১৬ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন, কথা বলার অধিকার হরণ, দুর্নীতি-নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধেই ছিল আমাদের অভ্যুত্থান। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চেয়েছি যেখানে সবাই কথা বলতে পারবে, মত প্রকাশ করতে পারবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা এমন বেশ কিছু চিত্র দেখেছি যেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল। আমরা জানি না ওই শিক্ষার্থীরা কোন মতাদর্শ ধারণ করে। সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কেউ ফুল দিয়ে তার শোক পালন করতে চায়, আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাকে বাধা দিতে পারি না। স্বাধীন বাংলাদেশে যখন যে ক্ষমতায় এসেছে, তখন শুধু তার সুপ্রিম মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, বাকিদের শ্রদ্ধা জানানো দূরের কথা, উলটো ছোট করা হয়েছে। যার যতটুকু সম্মান প্রাপ্য, ইতিহাসে যে জায়গাটুকু তারা ধারণ করেন, তা তাদের দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কথা বললে যে মানুষগুলোর অবদান একদম অনস্বীকার্য, তাদের প্রত্যেককে তাদের অবদানের জন্য স্মরণ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে কথা বললে যাদের অবদান একদম অনস্বীকার্য, যে যতটুকু সম্মান পাওয়ার যোগ্য তাকে ততটুকু সম্মান দিতে হবে। কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছোট করা যাবে না। শেখ মুজিবুর রহমানের যতটুকু সম্মান প্রাপ্য তা তাকে দিতে হবে, জিয়াউর রহমানের যে সম্মান প্রাপ্য তা তাকে দিতে হবে। লংটার্মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফরমটি ব্যবহারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলেও জানান সারজিস। তিনি বলেন, তারা স্থিতিশীল অবস্থায় আসার জন্য অপেক্ষা করছেন। একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ‘ভুয়া সমন্বয়ক’ হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে সারজিস বলেন, এমনও খবর পেয়েছি যে, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে নাকি একটি কমিটি হয়েছে, যারা মসজিদে গিয়ে মসজিদ কমিটিকে পদত্যাগ করতে বলেছে। অথচ আমরা আমাদের জায়গা থেকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কমিটি দিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য এবং কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এই মানুষগুলো এমন কিছু কাজ করছে যা অপ্রত্যাশিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আসার পর আমরা এই প্ল্যাটফরমটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্ট বার্তা-যেখানে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিম আসবে, তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ছাত্রসমাজকে সেখান থেকে সরে যেতে হবে। আপনাদের অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাসে ফিরে যেতে হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেন, ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ধানমন্ডি ৩২-এ গিয়েছিলেন। তার গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। কেন? তিনি যদি ওই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন, তিনি সেখানে ফুল নিয়ে যেতে পারেন, আমরা বাধা দিতে পারি না। বরং আমরা যদি মনে করি, তিনি যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন, যে ব্যক্তিকে তিনি অনুসরণ করেন, তিনি অনুসরণযোগ্য নন, আমরা তাকে বয়কট করতে পারি। কিন্তু তার গাড়িতে হামলা করা বা গায়ে হাত তোলার অথরিটি আমাদের কেউ দেয় না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা সব জায়গায় বলেছি, যেটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত, সেটিই যেন বাস্তবায়ন হয়।’ আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত না করা সরকারের প্রথম ব্যর্থতা-হাসনাত আবদুল্লাহ : বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে আহতদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারা এবং আহত-নিহতদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে না পারাকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ব্যর্থতা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের নিন্দা জানিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত এসব কথা বলেন। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রতিনিধি দল রাজধানীতে ছয়টি হাসপাতাল পরিদর্শনে করে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে পরিদর্শন কর্মসূচি দিয়েছে তারা। সোমবার সপ্তাহব্যাপী ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে। কর্মসূচির অংশ হিসাবে শনিবার ‘স্ট্যান্ড উইথ দ্য ইনজুরড’ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। রাজধানীর হাসপাতালগুলো হলো-জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল, উত্তরা বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে অনেক দিন হয়ে গেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা যে খবর পেয়েছি, এতদিন পর্যন্ত আহতদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারা এবং আহত-নিহতের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে না পারা এই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ব্যর্থতা হিসাবে চিহ্নিত করতে চাই। হাসনাত বলেন, সরকারের উচিত ছিল শুরুতেই এসে যারা আহত হয়েছেন এবং যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান নিশ্চিত করা। আজ পর্যন্ত আমরা আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাইনি। আমরা শিক্ষার্থীরা আহতদের খোঁজ নিচ্ছি। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না। সেজন্য আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের নিন্দা জানাচ্ছি।