• বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ধৈর্য ধরে সরকারকে ঘর গোছানোর সময় দিতে হবে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৪  

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দপ্তর থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রেস ব্রিফিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তবে এটি যেন চাটুকারিতার মঞ্চে পরিণত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে এই প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ লিখেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের বয়স আজ ৯ দিন মাত্র। প্রাতিষ্ঠানিক ধ্বংসস্তূূপ থেকে দেশ পরিচালনা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরে সরকারকে একটু সময় দিতে হবে ঘর গোছানোর জন্য। সরকারের সিদ্ধান্তের যথার্থতা ও পদক্ষেপের সঙ্গতির আলোচনা ও সমালোচনার অনুকূল পরিবেশ এখন গড়ে উঠছে। এখান থেকে শুরু হোক গণতান্ত্রিক চর্চা। ফেসবুক পোস্টে ড. জাহিদ হোসেন লিখেছেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় রূপান্তরের যে অধ্যায় শুরু হলো তা ইতিহাসে বিরল। এই নতুন পথের গন্তব্য একটি গণতান্ত্রিক প্রথায় সুশাসিত, বৈষম্যবিহীন, প্রগতিশীল সমাজ। নির্বাচিত সরকার যে কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হতে পারে তা বাংলাদেশীদের শিখিয়েছে বিগত সরকার। অনির্বাচিত সরকার গণতান্ত্রিক হতে পারে কিনা তা এখন দেখার সুযোগ করে দিল আমাদের শিক্ষার্থীরা। আশা করি, তারা নিজেরাও গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী করায় পূর্ণ সচেতন থাকবেন এবং সহযোগী হবেন। তিনি স্ট্যাটাসে বলেন, সরকারের স্বচ্ছতা বাড়ানোর পথে এখন আর বাধা নেই। এই ধরনের ক্রান্তিকালে নাগরিকরা জানতে চায়- কী হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, কোথায় যাচ্ছি। মুক্ত হয়েছি কিন্তু আগামীতে মুক্তির ধারাবাহিকতার নিশ্চয়তা কতটুকু? স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগের একটি নিয়মিত ব্যবস্থা দরকার। উপদেষ্টাদের অনেকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এটা এক ধরনের সংযোগ। সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে নিয়মিত ব্রিফিং সেই তুলনায় বেশি খাঁটি। এমন উত্তম চর্চা অনেক গণতান্ত্রিক দেশে আছে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার গণমাধ্যমের সম্মুখীন হলে ভালো হতো। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা নিজে এলে আয়োজনটা সহজ হয়ে যায়। তেমন কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে না। কারণ উপস্থিত বক্তা তো বটেই, সঞ্চালনেও উনি পারদর্শী। উনার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যপত্রই যথেষ্ট। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে উনার প্রতিটি ব্রিফিংয়ে আসা সম্ভব হবে না। সেই ক্ষেত্রে উনার প্রেস সচিব উপস্থাপনা ও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। খোলামেলা পরিবেশে প্রেস ব্রিফ হতে হবে। এটি যদি চাটুকরিতার মঞ্চে পরিণত হয় তাহলে সব বিফলে যাবে। বিদেশী সাংবাদিকদের জন্য বাংলাদেশের ভিসা সহজ করারও আহ্বান জানান বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। ফেসবুক পোস্টে জাহিদ হোসেন লিখেছেন, ‘দ্য ইকোনমিস্টের সাংবাদিক ঢাকায় আসতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে কী ঘটছে তা জানার জন্য। ভিসা না পেয়ে তারা দিল্লি থেকে রিপোর্ট লিখেছেন। ধরে নেওয়া যেতে পারে বাংলাদেশ দূতাবাস আগস্ট ৫ এর আগে ঘটনা লুকানোর জন্য তাদের সরকারের পছন্দমতো প্রতিবেদন দেবে না এমন সাংবাদিকদের ভিসা দেন নাই। তিনি বলেন, এখন সময় বদলেছে। তবে বিশ্ব জানে না কীভাবে, কী ধরনের এবং কতটা বদলেছে। অনেক কুৎসা রটানো হচ্ছে। এতে বাঙালি তরুণদের বীরত্বের গল্পটি আন্তর্জাতিক মণ্ডলে সঠিক প্রচার পাচ্ছে না। ওরা আসুক, দেখুক, বুঝুক, বলুক আমাদের তরুণরা কীভাবে তাদের জীবন রক্ত আর ঘাম দিয়ে একটি দানব সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তারপর কীভাবে তারা জনসেবা করে যাচ্ছে, কীভাবে রাজনৈতিক অধিকারের অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা রাখছে। ওরা শুধু আমাদের নয়, ওরা সারাবিশ্বের বিস্ময়, ওরা মানব অধিকার যোদ্ধাদের অহঙ্কার। তিনি বলেন, বিদেশী সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আসার জন্য ভিসা দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করা দরকার। কী ধরনের স্টোরি করবে তার কোনো শর্ত আরোপ করা যাবে না। দানব সরকার পজিটিভ স্টোরি করার শর্তে বিদেশী সাংবাদিকদের ভিসা দিত বলে প্রায় শোনা যেত। নতুন বাংলাদেশের কাহিনী জানতে দিল্লি যেতে হবে কেন? সেখান থেকে কী বিকৃত চিত্র দেওয়া হবে না? ঢাকায় কেন আসতে পারবে না? এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।