• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংক খাতের উন্নয়নে হবে তিনটি টাস্কফোর্স : গভর্নর

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

দেশের ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি উন্নয়নে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট ও লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক ইস্যুতে তিনটি আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এসব টাস্কফোর্স গঠনে কেমন সময় লাগবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে টাস্কফোর্সে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষজ্ঞদের রাখা হবে। বিশ^ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকেও বিশেষজ্ঞ আসতে পারেন। গতকাল বুধবার ব্যাংকার্স সভায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে আলোচনায় টাস্কফোর্স গঠনের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বৈঠকে থাকা একাধিক ব্যাংকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে টাস্কফোর্সগুলো গঠনের কাজ শুরু হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চার দেশে থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাচারকারীরা মূলত যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার করেছে। বিদেশি সম্পদ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা হয়েছে। পাচারকারী একটি পরিবারের বৃটেনে ৫০০ থেকে ৬০০ বাড়ি আছে। আমরা শুরুতে তাদের দেশের সম্পদ উদ্ধার এবং পরে বিদেশে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর টাকা পাচার হয়েছে উল্লেখ করে পাচারকারীর দেশে থাকা সম্পদ উদ্ধার করব। প্রথমে আমরা এ উদ্যোগটি নেব। পাশাপাশি বাইরের দেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার বিষয়েও সহায়তা চেয়েছি কয়েকটি দেশের কাছে। বাইরের টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উচ্চ আশা করব না, তবে শক্তভাবেই আমরা ধরব।’ গভর্নর বলেন, ‘দেশ থেকে ৭-৮টি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর টাকা পাচার হয়েছে। এতে এসব ব্যাংকগুলোয় তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। আমরা সীমিত পরিসরে তারল্য সাপোর্ট দিতে চাই। সরকার আমানতকারীর কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়াবে। তবে পুরো সাপোর্ট দিতে হলে ২ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে বহুগুণে। আমরা কিছু সীমিত তারল্য সাপোর্ট দিতে চাই ব্যাংকগুলোকে। আন্তঃব্যাংকের মাধ্যমে এ সাপোর্ট দেওয়া হবে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করবে। সব ব্যাংকে সমস্যা বহুদিন ধরে ছিল, আমানতকারীরাও জানত।’ এ সময় আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি। গভর্নর বলেন, বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আসবে। এসব ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এরপর ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এসব ব্যাংক পুনর্গঠন করে একা চলবে, নাকি কারও সঙ্গে একীভূত হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে। ছোট ব্যাংক হলে অবসায়নও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক টাকা নাই হয়ে গেছে। এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে এসব ব্যাংক মেরামত করতে।’ পুনর্গঠন হওয়া ব্যাংকগুলোকে আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এসব ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদের সভা এক-দুই মাস অন্তর করলে চলবে না। তাদের নিয়মিত কাজ করতে হবে, সভা করতে হবে। ফলাফল কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। আমরা প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানব।’ গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পলিসি রেট বাড়তে থাকবে বলে গভর্নর জানিয়েছেন আমাদের। আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে পলিসি রেট ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর বাজারভিত্তিক উদার সুদহারে বিশ্বাস করেন। উনি তা বাজারভিত্তিক করে দিয়েছেন। ঋণের সুদহারে অলিখিত কিছু সীমা ছিল, তিনি সেটিও তুলে দিয়েছেন। ব্যাংকারদের নির্দেশনা দিয়েছেন, অস্বাভাবিক কোনো ঋণের সুদহারে যেন তারা না যান।’ ডলারের দরের বিষয়ে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিনিময় হার এখন ১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। আমরা এ রেটেই ব্যবসা পরিচালনা করব। খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২১-১২২ টাকায় রয়েছে। ডলার মার্কেটে এখন স্থিতিশীলতা এসেছে। এ মাসে আমরা আড়াই বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স পাব বলে আশা করছি। এলসি খোলা ধীরগতির হয়েছে, এটা অনেকটা ভোগের ওপর নির্ভর করে। চাহিদাও অনেক কমে গেছে। বাজারে এখন ডলারের কোনো অভাব নেই। যার যখন প্রয়োজন এলসি খুলতে পারছেন।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, গতকালের বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে আগের গভর্নরের আমলে সার্কুলারের বাইরে মৌখিকভাবে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো এখন আর কার্যকর থাকবে না। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে সুদের হার নিয়ে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাবে। অর্থাৎ মৌখিকভাবে বেঁধে দেওয়া ঋণের সুদহার এখন আর ১৪ শতাংশে আটকে রাখা হবে না। মার্কেট অনুযায়ী ঠিক হবে ঋণের সুদহার। তবে এই প্রতিযোগীতার ক্ষেত্রে কেউ যাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় বা অনৈতিকতার আশ্রয় না নেয়, সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তারা আরও জানায়, একই সঙ্গে আগের গভর্নরের সময়ে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার ১৮ শতাংশের বেশি যাতে না যায়, সে মৌখিক নির্দেশনা ছিল। সেটিও বাতিল করে সার্কুলার অনুযায়ী সুদহার নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বিভিন্ন ধরনের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন আগের গভর্নর, সেসব নির্দেশনাও তুলে নেওয়া হয়েছে।