• মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

  • || ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে কাঠের তৈরি ঘর

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৪  

বাগেরহাটের কাঠের তৈরি বাড়ির চাহিদা বেড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দেখতে সুন্দর, আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বের বহু দেশে এর চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে পার্ক, রিসোর্ট, কটেজে এমন স্থাপনার কদর বেশি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবার ইউরোপে সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি বাড়ি রফতানি করতে যাচ্ছে বাগেরহাটের ‘ন্যাচারাল ফাইবার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাড়ির কাঠামো, দেয়াল এমনকি ছাদও কাঠের তৈরি। পর্যটকদের থাকার জন্য ‘বোট টাইনি হাউস’ নামের ইকো-কটেজগুলো দেখতে অনেকটা উল্টো নৌকার মতো। ঘরের পাশাপাশি চেয়ার-টেবিল, আলমারি, খাটসহ সব আসবাব কাঠের তৈরি। এসব বাড়ি তৈরি হচ্ছে বাগেরহাটে জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কররীতে। সেখানকার ‘ন্যাচারাল ফাইবার’ নামের কারখানাটি বেলজিয়ামের জনপ্রিয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা ‘পাইরি ডাইজা’র জন্য এসব ঘর তৈরি করছে। আসবাবসহ প্রাথমিকভাবে ১১০টি ঘরের ক্রয়াদেশ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কররী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় শ্রমিকরা কারখানার মূল শেডে দেশি প্রযুক্তিতে ঘর তৈরি করছেন। প্রথমে কাঠের ফ্রেমে মূল কাঠামো দাঁড় করানোর পর ওপরে ছোট ছোট তক্তা লাগাচ্ছেন। পাশে তক্তাগুলো প্রস্তুত করছেন অন্য শ্রমিকরা। ন্যাচারাল ফাইবার কারখানার প্রধান নির্বাহী মোজাহিদ আহমেদ বলেন, বেলজিয়ামের ‘পাইরি ডাইজা ইকোপার্ক অবকাঠামোর বড় পরিবর্তন আনছে। যার সবকিছুই কাঠের হবে। ‘বোট টিনি হাউস’ নামের এই ঘর বানানোর জন্য ব্রিটেন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দরপত্রে অংশ নিয়ে তারা কাজ পেয়েছেন। এ জন্য প্রথম নমুনা ঘরটি তারা তৈরি করছেন। এর আগে, বেলজিয়ামের ওই পার্কে হাতি চলাচলের করিডর ও বেড়া দেওয়ার চার শতাধিক খুঁটি তৈরির কাজ পেয়েছিল ন্যাচারাল ফাইবার। প্রথম চালানে ১৬২টি এরইমধ্যে বেলজিয়ামে পাঠানো হয়েছে। মোজাহিদ আহমেদ বলেন, খুঁটির কাজটিতে তারা বেশ সন্তুষ্ট হয়েছেন। এ জন্য ঘর তৈরির বড় কাজটিতে তারা ন্যাচারাল ফাইবারের ওপর আস্থা রেখেছে। তিনি আরো বলেন, ঘরের ছাদ যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য আইপিই বা ইপে নামের একধরনের বিশেষ কাঠ ব্যবহার করা হবে। ওপরে পানি প্রতিরোধী প্রলেপ দেওয়া থাকবে। কোনো রং করা হবে না। ইপে আফ্রিকান গাছ, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। এ ছাড়া সবই স্থানীয় গাছ দিয়ে তৈরি হবে। কররী গ্রামের কারখানায় বসে ‘কোকো-ম্যাট-এর সহ-তিষ্ঠাতা পল এফমরফিডিসের সঙ্গে কথা হয়। বাংলাদেশে এসে তিনি খুবই গর্বিত। পল বলেন, ইউরোপের অন্যতম বড় চিড়িয়াখানা পাইরি ডাইজার জন্য তারা কাঠ দিয়ে বাড়ি তৈরি করছেন। বাংলাদেশের মেহগনিগাছের কাঠ এতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘরের ভেতরের সবকিছু হবে কাঠের। সবটা এখানেই তৈরি হবে। নোই বিল্ডার্সের প্রতিষ্ঠাতা এভাঞ্জেলিয়া পালিয়ারি বলেন, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা মোজাহিদ একসময় কাজের জন্য গ্রিসে ছিলেন। বাংলাদেশি উদ্যোক্তা জানার পর তাদের সহায়তা করতে চেয়েছেন। এখন তাদের বাড়িতে থাকছেন। তাদের পরিবার এখানকার (বাগেরহাট) গ্রামীণ নারীদের কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। এটি একটি সামাজিক প্রকল্প। তারা তাদের এগিয়ে নিতে চান। ন্যাচারাল ফাইবারের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজের ধারাবাহিকতায় তারা গত বছর কাঠের সাইকেলসহ পরিবেশবান্ধব বেশ কিছু পণ্যের ক্রয়াদেশ পেয়েছিলেন। তাদের মাধ্যমে এবার বেলজিয়ামের একটি ইকোপার্কের জন্য ফেন্সিং পিলারের ফরমাশ পান। এরপর ঘরের কাজটি পেয়েছেন। পার্ক কর্তৃপক্ষ ঘরের নকশা দিলে তারা তৈরি করে দেখান। তারা সেটি পছন্দ করেছেন। কোথায় কোন কাঠের ব্যবহার হবে, কীভাবে ট্রিটমেন্ট করতে হবে সবকিছু চূড়ান্ত। ঘরের গুণগত মানের জন্য তাদের কনসালট্যান্ট এক মাস থরে তাদের সঙ্গে কাজ করছেন। ইউরোপের অন্য দেশেও এমন পাঠানোর আলাপ চলছে জানিয়ে মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, ঘরের একেকটি অংশ আলাদা করে কনটেইনারে মাধ্যমে বেলজিয়াম পাঠানো হবে। তাদের কর্মীরা সেখানে গিয়ে ঘর অ্যাসেম্বল (সাজিয়ে) করে দিয়ে আসবেন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল